Monday 9 April 2018

সঞ্জয় চ্যাটার্জী





অবুঝ সকাল

ট্যাঙ্ক ভরে গেলে শেডের উপর জল পড়ে ছিটে ওড়ে আশেপাশে। রাস্তা ভেজে, শেডও ভেজে, আর ভেজে দেয়াল। ঐ জলে স্নান করেনা কেউ। ঐ জল গৃহিত হয়না কোনও গৃহস্থে। শিশুরা অবুঝ। জলকেলি করে ওরা। পথচলতি মানুষ এড়িয়ে যায়। আড় চোখে চেয়ে, মনেমনে গালমন্দ করে। হয়তো বা কেউ চেঁচিয়েও বলে, শুনছেন? পাম্পটা বন্ধ করুন না ! ক্বচিৎ কানে যায় বাড়ির লোকের। নয়তো ঝরতেই থাকে অফুরান। জল পড়ে পড়ে শ্যাওলা জমেছে শেডের উপর, আর দেয়ালে গজিয়েছে ফার্ণ বা মস। পরিষ্কার হয়না সেসব কতদিন। দু একটা আগাছাও মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। রোজই লোকে দেখে, আর পা ডিঙিয়ে চলে যায়। অনেকেই থুতু ফেলে। অনেকেই ফেলে নোংরা। আবর্জনা জমছে ধীরেধীরে। কাক-কুকুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। সেদিন এক ময়লাকুড়ুনিওলা ছেলে এলো। জলের ছিটায় ভিজল অনেকক্ষণ। আপনমনেই গাইল দু এক কলি। বস্তা থেকে বের করে আনল ভাঙা কর্নিক। দেয়ালগুলো ঘষল আপনা হতেই। নোংরা ঘেঁটে তুলে নিল চুলের ভাঙা ক্লিপ, কটা জংধরা সেফটিপিন, মলিন মেয়েলি রুমাল, আর ছেঁড়া অন্তর্বাস। বস্তায় ভরে উপরদিকে চেয়ে ভিজে নিল আর একবার। তারপর আপন মনেই গাইতে গাইতে চলে গেল। বাড়িটা কি তখন করুণ চোখে চেয়েছিল ছেলেটির যাবার পথে? তারও কি ইচ্ছে করেনি একবার হাত ধরে বলে তাকে, থেকে যাও ! আসলে সেতো বলতে পারেনা মানুষের মতো করে। কিংবা তাকে বলতে নেই ওসব নীচু জাতের ছেলেকে।......এ বাড়ির সতেরো-উর্ধ মেয়েটিরও সেই দশা।

No comments:

Post a Comment