Monday 9 April 2018

এনাক্ষী রায়





গল্প হয়ে ওঠার আগে



১.
এই অস্থিরতার কোনো শেষ নেই। অস্থিরতা আমার চোখের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় যাবতীয় গত হয়ে-যাওয়া ছবি। ঢুকিয়ে দেয় মহাবিহারের ধ্বংসস্তূপ। গায়ে কাঁটা দেওয়া, শিহরন বাকি সব গল্পে ঢুকে পড়ে। ঢুকে পড়ে স্থাপত্যের ইতিহাস। আর আমি দেখি নালন্দা বা ওদন্তপুরি থেকে হেঁটে আসছেন শীলভদ্র। অতীশ দীপংকরকে নিয়ে যুদ্ধ বাধছে রাজায় রাজায়। সে গল্পের ছলে পৃষ্ঠার ঠোঁট নড়ে উঠছে অবিকল চুম্বনের মতো ছুঁচালো।

শীতল হাতের মধ্যে খেলা করে যে সমস্ত কাটাকুটি, সে সব অন্য যুগের। ম্লান হয়ে-আসা সূর্যের শিখার মতো আমার অলিন্দে ঢুকে পড়ে ছাত্রদের আবাসিক ঘর। গা ছম ছম করে।
 পাথরের বিছানায় বিছানায় দেখি ছেয়ে আছে পূর্বপুরুষদের শয্যা। স্মৃতির ভেতরের পাতায় তারা সব সুড়ঙ্গ খুঁড়ে রেখে গেছে। স্তূপ থেকে স্তূপে পুরনো পাতার মতো পুঁথিপৃষ্ঠা উড়ে এসে পড়ে।


২.
একটা অন্ধকার থেকে আরেকটা অন্ধকারে চলে যায় জীবন। যেখানে যেখানে পা ফেলি সত্যি হয়ে জেগে থাকে সেই মুহূর্তটুকু। তবু মিথ্যে ছিল না কাল গত। মিথ্যে হবে না আগামীও। অন্ধকারের সুড়ঙ্গ খুঁড়ে জেগে উঠবে পানপাত্র, তৈজস। পাথর চাপা-পড়া ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি আরও স্পর্শকাতর হবে। ভেঙ্গে যাবে চুরচুর ক'রে আমাদেরও গোপন ইচ্ছা।

কোথাও কিচ্ছুটি নেই। একটা বাতাস যেন জেগে থাকে শুধু, তরঙ্গমাত্র। সে-ই দেয় শিস। কোনো এক ছিদ্র পেয়ে লুফে নেয় সমস্ত দুর্বলতা।  সমর্পণ সমর্পণ এফোঁড় ওফোঁড় শুধু বাতাসই ডেকে যায়। স্পর্শ ভেবে ভেবে অক্ষর অক্ষরে গড়ায় অপূর্ব ভঙ্গি। হিম হিম একটা সময়ে জেগে ওঠে নদী। তখনই সূর্যাস্তকাল এসে পড়ে  অন্দরে। আগুনের মতো রাঙিয়ে রাঙিয়ে ছাইবর্ম পরে নেয় জল।


No comments:

Post a Comment