Monday 9 April 2018

সৌমনা দাশগুপ্ত






সাইরেন

একদিন ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করবে তুমি তোমার নাম হারিয়ে ফেলেছ ঠিক তখনই চিৎকার করে উঠবে আকাশ আর তুমি দেখবে একটা জমকালো পরদার মতো বৃষ্টি তোমার ঘরের চারদিকে দুলতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে তোমার সর্বাঙ্গে কালো এবং উজ্জ্বল অজস্র উল্কি জেগে উঠবে আর এই বৃশ্চিক চিহ্নের ভেতর একটা নখ গরিষ্ঠভাবে  ফুটে উঠবে একটা থাবা ঢুকে যাবে তোমার ছায়ার ভেতর এবং তুমি এবার সম্মোহিত হতে থাকবে তোমার ঘর ততক্ষণে দেশভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছে আর সবুজ চোখওয়ালা সেই বেড়াল লুকোচুরি খেলতে শুরু করবে তোমার সঙ্গে তোমার স্বপ্নে প্রতিদিন একটু একটু করে কুয়াশা ঢুকে যাচ্ছে সামাজিক বনসৃজনের সময়ের ভারি এবং কর্কশ এই চামড়ার আচ্ছাদন, যা তোমার মুখে পরে নিয়েছিলে , এখন আর খুলে রাখা যাচ্ছে না এবার তোমার হাড়ের ভেতর কিছুটা হাওয়া ঢুকে যাচ্ছে এবং তুমি এবং তুমিই একমাত্র আপতকালীন সাইরেন হয়ে বেজে উঠছ সাবধান



লোহিতকণা


নাম্বার মুছে দিতে দিতে তোমার ফোন একদিন অন্ধকার হয়ে উঠবে এবং তুমি আর কিছুতেই তোমার ছায়ার চাইতে স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারবে না ছায়া ধুয়ে ফেলতে তুমি সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যেতে চাইবে আর প্রতিবার সূর্যস্নানের শেষে তোমার ভেতরে অন্ধকার একটা ঢেউ ঢুকে যাবে অন্ধকারকে জড়িয়ে নিতে নিতে তুমি এবার ঘুমিয়ে পড়তে চাইবে আর খটখটে শুকনো একটা পুকুর নিয়ে জেগে উঠতে উঠতে বুঝতে পারবে এর সবটাই ছিল স্বপ্ন ডাকবাক্স আরো লাল এবং উৎসুক হয়ে উঠবে এবং এখন থেকে তোমার আর কোনো চিঠি আসবে না স্বপ্নের ভেতর শুধু কাক ডাকতে থাকবে আর তোমার জন্য তৈরি হচ্ছে ক্যানভাস অথচ তুমি তৈরি হয়ে উঠতে পারছ না, এরকম কিছু ব্যর্থতাবোধ একটা হালকা এবং মৃদু পর্দার মতো তোমাকে ঘিরে ফেলবে এত দ্বিধা কেন? এবার উঠে বসো রং তুলি সব তোমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে পুড়ে লাল হয়ে উঠছে তামা তুমি ধাতুর কান্না শুনতে পাচ্ছ না শুধু বালি হাতড়েই চলেছ কালো এবং তরল একটা নদী তোমার দিকে এতটাই এগিয়ে এসেছে যে তুমি আর জলের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছ না এই স্রোত তোমাকে সংক্রামিত করছে একটা শিকারি বেড়ালের মত ক্ষিপ্র এবং সতর্কভাবে তোমার রক্ত এইমাত্র চলতে শুরু করল তুমি কি হাওয়ার ভেতর কোনো শব্দ পাচ্ছ না? উঠে বস এই যে এত লাল রং চারদিকে তুমি কিছু লোহিতকণা লিখবে না?    


বালিমানুষ

একটা মৃত হাত উপহার দেওয়ার পর থেকে পিঁপড়েদের পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া অন্য সব কাজের প্রতি তুমি উদাসীন হয়ে পড়বে হত্যাদৃশ্য দেখে ফেলার পর স্বভাবতই তুমি এক শববাহী গাড়ি হয়ে উঠেছ এবার থেকে তোমার আগের জন্মের যা কিছু, সবটাই বাহুল্য মনে হতে থাকবে এবং এই প্রথম তুমি বর্জন করতে শুরু করবে তোমার যাবতীয় আয়না আর চূড়ান্তভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে প্রসাধনীর ওপর এই জন্মের ছায়া এবার বেরিয়ে পড়বে গত জন্মের শরীরকে খুঁজতে এবং তোমার পিয়ানো চিৎকার করে উঠবে সমস্ত চামড়ায় কালশিটে ফুটে ওঠার পরই তুমি চিনতে পারবে রক্তপাতহীন এই আঘাতগুলিকে আর ছুরি এইসময় শর্তহীনভাবে হেসে উঠবে সবটা লবণ ধুয়ে ফেলার পর সমুদ্রকে আর সমুদ্র বলে চেনা যাচ্ছে না আর বালি নিয়ে খেলতে খেলতে তুমি নিজেই কবে যেন একজন বালিমানুষ হয়ে গেছ, প্রত্যঙ্গ খুলে খুলে আসছে রক্ত আর কথা বলছে না ধমনীর ভেতর ডুকরে উঠল হাওয়া শরীর আর ছায়াকে খুঁজে পাচ্ছে না শুধু বাতাস হাতড়িয়েই চলেছে, শুধু আলো হাতড়িয়েই চলেছে আর একরোখা হয়ে উঠছে দৃশ্য সরে সরে যাচ্ছে আর চাঁদের ভেতর থেকে তুমি খুঁজে নিচ্ছ চেরা চেরা দাগ কালো এবং ভারী কিছু মেঘ এবার হইহই করে উঠল সেই কবে থেকে হাঁস মুছে দিতে দিতে তুমি আসলে জল মুছতে শুরু করেছ আর বালিয়াড়ি ঢুকে গেছে প্রচ্ছদে তুমি জানতেও পারোনি এরপর থেকে তুমি শুধু সরলরেখায় হাঁটবে











1 comment: