Saturday 7 April 2018

সুমন ধারা শর্মা



একগুচ্ছ কবিতা



বোধগম্য

সে মৃত
আশ্বাস নেই শুকনো গোলাপ আছে

সে জানত
পরিচয় নেই, দক্ষতার সঙ্গে আলাপ আছে

অবশেষে
এখানেই ঘুরে ফিরে আসতে হবে

সে জানত
আমি অত্যন্ত অবলীলায় তাকে ফেরাব

সে জানত
উষ্মা বা আস্বাদন জরুরী ছিল না

সে মৃত
পরিচয়হীন পড়ে ছিল অনেকক্ষণ

সে জানত
মৃত্যু ক্ষয় - সম্মোহনহীন চূড়ান্ত
আবেগের আলিঙ্গন ব্যতীত আর কিছুই নয়

সে জানত
সে মৃত


এইসব প্রশ্ন স্ফটিকে
                   
কড়া নাড়া রাত আজ বেজে বেজে থেমে যেতে
বলে। দূরত্ব বলে যাই, মাঝরাতে ভাল বচসাই
রাতে ঘুম নেই বলে ব্যালকনি সিগারেটে ঢাকি

কে কোথায় বাতি হাতে কেরোসিন জ্বালিবারে

কে কোথায়? নেপথ্য কম্বলে ঢাকা?
রাতহীন শরিকের গাড়ি আসে, হইচই তুলে
ফুলে ফুলে ঢাকা থাক এইসব স্মৃতির টেবিল

কে কোথায়? যন্ত্র না মন্থরগতি?
নম্র স্মৃতিরা বলে,
হারাকিরি প্ল্যানচেট হারিকেন হাতে
কারা যায়? কারা গেল?
এইসব প্রশ্ন-স্ফটিকে?











অসমাপিকা
              

দীর্ঘ অবতারণার প্রয়োজন
সীমিত বাক্য দায়হীন
একথা সেকথা বলে এড়িয়ে যাওয়ার মতো

দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে জিরোতে হয়
মনে করতে হয়, কী কী ভুল করলাম
ভাবলাম কিন্তু পেছনে হাঁটতে পারছি না

মাঝে মধ্যে নিজের সঙ্গে কথা বলি
কিন্তু, ভেতর থেকে উত্তর আসে না
সেও আমার সঙ্গে কথা বলছে না, অথচ বন্ধু

তকমা ছেড়ে বেরিয়ে এসো
চালচুলো-কৌপীন ছেড়ে মাটি কামড়ে ধরো
সময়কে সঙ্গে নাও

এসবই তোমার
বিনা বাক্যব্যয়ে যে কাজ হয় না
তার জন্য, দীর্ঘ, সুদীর্ঘ পথ হেঁটে এসো

নিজের সঙ্গে কথা বল








উন্মাদতন্ত্র
              

উন্মাদতন্ত্র থেকে কলিং বেল টিপে টিপে সারাদুপুর নষ্ট
কল্পবিজ্ঞান থেকে বাদুলে মেঘ সারা গায়ে নামাবলি দিয়েছে
ছাতের আলসেতে বসে পা দোলাতে দোলাতে
শৈশব দেখি দেওয়ালে পোস্টার পড়ছে সারা রাত
মুখ থেকে লালার মতো ফাটা রেকর্ড বাজছে
এইসব স্বপ্নে ব্যাক-স্টেজ হয় না
রুজি রোজগার থাকে না
স্বপ্ন দেখতে হলে
বেহেড মাতাল হতে হয়

এইসব উন্মাদতন্ত্র ব্যান হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত
পর্যটক পাখির সঙ্গে ফিকে আলোর দিকে উড়তাম
আর সেসময়েই তুমি, হ্যাঁ তুমি
বেখাপ্পা সব গানের ঠুলি লাগিয়েছ
ইহকাল থেকে দু-একটা রসকলির মতো

আমি ফুঁপিয়ে কাঁদি
এ এক আশ্চর্য প্রলাপ
যার ভিশ্তি বা মশক কিছুই নেই
আদি অপারগ, অনন্ত শুনশান।









দাসত্ব
        

এসো হে জীবন,
তোমায় পেয়াদা করলাম

বাঁচা বা মরার মতো অভিনয়
যে কারণে নয়
যে জামায় ঝুলিয়েছি
দিগ্‌গজ পেন্ডুলাম

এসো হে জীবন
টিক্‌ টিক্‌ টিক্‌ টিক্‌
অ্যালার্ম ক্লকের মতো এসো

আমি তো নকলনবিশি শেষে
একরোখা কবিতা লিখেছি
রাস্তায় রেখেছি পচন
কবিতায় তোমায় রেখেছি

দাড়ি নেড়ে সমার্থক রায় দেন
পাঠকপ্রবর, নিদারুণ অভিযোগে
শ্লেষ্মারা ছুটে আসে
রাতভর হুংকার দেয়
এ আমার পরিচয়
সাধ্য বা সাধনার ক্ষয়

কাঁটায় কাঁটায় আজ
বুঝে নেওয়া ইশ্‌তেহার হাসে
আর আমি নবাগত
অনুনয়-বিনয়ের দাস
পঠন পাঠন শেষে
অতঃপর কলম ধরলাম





আবার ফিরছি শীতাতপ
                           

আগুন সাত্ত্বিক
তাৎপর্যপূর্ণ, যদি তাকে জানতে চাও

আমার শিশুটি ভিন্ন নয়
আঘাত পেতে পেতে যে
আগুনের মত ছড়াতে চাইছে

নিরাপদ দূরত্বে যাও
বাষ্পে নিখোঁজ হও
সাবধান হও, সে আছড়ে পড়বে অকপটে

এমন নির্ভুল চাঁদমারি সে কখনো পায় না
দূরত্ব রাখো
নিরাপত্তাও
আবার ফিরছি শীতাতপ
আঙুল মটকে
বাতিদান জ্বলে উঠুক, আমার শিশুটি
শিস দিতে দিতে
বাড়ি ফিরুক
নির্মল রাত আরও একবার পাশ ফিরে
গভীর নিদ্রায়

শিশু সাত্ত্বিক
কখনও তাৎপর্যপূর্ণও, যদি তাকে জানতে চাও


No comments:

Post a Comment