Monday 9 April 2018

অর্পিতা কুণ্ডু





সুজনেষু

উৎসর্গ: কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য ১৯৭০-২০১৭

এক
নেহাতই বসন্ত, তাই অন্য সমীরণ
নেহাতই মৃত্যু, তাই অন্যতর ফাগমুখী হাওয়া  
আলোর পৃথিবী থেকে তোমার আসন খুলে
বসিয়েছে উনুনের মুখে
গনগনে আঁচে
   থেকে থেকে উঠে আসে ভাতের বলক

সে আওয়াজ কারও ডুবকির বলে ভ্রম হয়



দুই

তোমার ওই হাত ধরে চলে আসা এ ভুবনডাঙে
এ মরণ সীমানা যে আমাকেই বেঁধে ফেলবে
                          পরতে পরতে
শৃঙ্খলিত করবে আর ছেড়ে দেবে আমরণ কূপে-

তখনও তা বোধগম্য হয়নি আমার

তোমার গলার দাওয়া, মাদুর বিছানো আছে
এসে বসি, একতারা নিয়ে? 












তিন

সত্যি এত সত্যি হয়, সত্যি যদি নাই হত, বিশ্বাস হত না

জলের ওপরে ধান, তার ওপরে খেত, তার ওপরে চাকা,
তার ওপরে হাওয়া, তারও ওপরে আকাশ...

সকলকে ডিঙিয়ে গেছ তুমি
সবার ওপরে


ও কার মরণফাঁদ সত্যি হয়ে ছড়ানো রয়েছে চরাচরে!



চার

আমাকেও ছেড়ে গেল গান
   মাটির, পথের আর ধুলোধুলো, ঈশ্বর-সমান

দোতারার মোড়ে মোড়ে হারিয়েছি সুর

চোখ যে জলের খনি, চুল যে সিঁদুর
   হারানোর অজুহাতে, আরবার, তোমাকেই চায়

গানও তো বেদন বোঝে
        ওকে একবার বলো

অন্তত ও যেন আমার সঙ্গে থেকে যায়...


পাঁচ

ও বাউল, তোমাকে হারিয়ে এত কষ্ট কেন, বলো! 

তুমি তো যাবেই আর আমিও তোমার পিছু পিছু
গান হয়ে ঢুকে পড়ব
                 তাপ্পিমারা ঝুলির ভেতর

তোমার আসনে বসে, তোমারই সাজানো শাক-ভাত 
পরমান্ন ভেবে খাব, মুখ আঁচাবো
                           শ্যাওলা কুয়োতলে  

ঝড় উঠবে। জটাজুট তোমার শরীরে ধুলো হব
   বালি হয়ে চোখে পড়ব করকর, করকর...

একতারার খোল হয়ে ফলে উঠব উঠোনে তোমার
কণ্ঠিবদলের দিনে গুরুর সমুখে গিয়ে
   গেয়ে উঠব দু’দশ কলির ভুল সুর-

এই অব্দি কথা ছিল। এই অব্দি লিখে রাখা
                              ভাগ্যের খাতায়

আজ তবে, ও বাউল, ছেড়ে যাচ্ছ যদি,
                বলে যাও-
         বলে যাও, দেখা হবে,
            বলো, ভালবেসেছিলে
                  হাত রাখো আমার মাথায়...  

No comments:

Post a Comment