Monday 9 April 2018

ঈশানী বসাক




স্বয়ংবিদা

প্রত্যেকটা বাড়ি একদিন বিধবা হয়ে যায়। থেমে যায় চাকা, চা দাও বড় বউমা , আজ স্কুলের খাতা দেখা বাকি মা , বাজার যাব না শুনছোওওওও। সব শেষ। ইতিউতি উঁকি মারে ঝোপঝাড়, শেকড় গেঁথে নেওয়া অশ্বত্থ। পিছন জানলায় হাত বাড়াচ্ছে বুনো ফুলের কুচি। মা মরা গন্ধে ভরপুর হয় ঘরগুলো। জঙ্গলের নেশা চিরে মালিক চলে গেছে কোথাও। ধুলো মোড়া ইঁদুরে কাটা দরজারা অপেক্ষা করে। সন্ধ্যাবেলা তাদের বুকে কান পাতলে হু হু বাতাস। ফিসফিস করে যেন কেউ এসে বলে ছোটবাবু তুলসীতলায় আলো দেবে না ? মা তোমার তুলসীগাছ তো বাড়েইনা। দেখো পাশ থেকে বেরিয়েছে গাঁদা। ঈশ্বরের যা ইচ্ছা তাই, বলে মা। প্রতিদিন আলো জ্বালাতে জ্বালাতে ভয় হতো। যেন এক গুহার কাছে প্রার্থনা। সুড়ঙ্গ পেরোলেই পেয়ে যাবে অনন্ত ঘুম। বৃষ্টি পড়ছে , দেখো তো ছোটবাবু ছাতা কই? আঁচার তুলে আনো। একটু রোদ পড়ে না , কেন যে আমগুলো দিলাম। উঠোনে বেগুনী ছোপ। শ্যাওলারা পুরনো হলে এমন দুখীমুখে বসে থাকে। এখন আর বৃষ্টিতে আঁচার ভেজেনা। এখানে কেউ আসে না, কারোর ফিরে যাওয়ার নেই। ছাদে লক্ষ্মীপ্যাঁচা গভীর রাতে ডাকে, কি গো বউদি গরমকালে তোমরা সব কই? একাদশী আজ। পুরনো মানুষ তো। ওঁর চুড়ির শব্দ না পেলে আর আমাদের মুক্তি হবে না। তালাগুলো দু হাত খুলে উড়তে পারে না। আমাদের হাত দুটো খুলে দেবে গো ছোটবাবু। নাকি মা ওই তুলসীঝোপে লুকিয়েছে , সেই রাগে তুমি আর আসবেই না?

No comments:

Post a Comment