Tuesday 10 April 2018

অর্ণব সাহা






মাদমোয়াজেল


সব প্রেম অবৈধ । সব রাস্তা রোম অব্দি যায়...
আমরাও গোটা জীবন শুধুই অপশন খুঁজে ফিরি
#
পুরুষ খেলনা আর সব মেয়েই কলঙ্কিনী রাধা
মোড়ে মোড়ে ডিস্কোথেক, একটাও কুঞ্জবন নেই !
#
দু’মাস অন্তর রাধা তিনটে করে বয়ফ্রেন্ড পালটায়
পিছুটান ঝেড়ে কৃষ্ণ গোপিনীর বিছানায় ওঠে
#
ঘা-খাওয়া বাঘের বাচ্চা প্রেমিকেরা সুপারি কিলার
মেয়েরা অন্য পুরুষের বুকে মৃদু আঁকিবুকি কাটে !
#
সব কবি ক্রিমিনাল । সব গাইয়ে মাফিয়ার ঘুঁটি ।
নিউকামার-ও জানে এটা ‘পেজ-ফোর, অলসো আ গেম’
#
প্রেম একটা অলৌকিক নো-ম্যানস ল্যান্ডের খেলাধুলো
হারুকি মুরাকামির বেড়ালের সঙ্গে কথকতা
#
মুখ-বন্ধ টানেলের আটকে-পড়া ইঁদুরের মতো
কৃষ্ণেরা মরে আর রাধা আই.টি পাত্র খুঁজে নেয় !






ডিসটোপিয়ার গল্প বলব তোমাকে এখন
আকাশে মেঘের ঝুলন্ত গাছ, অণৃতকথন
#
প্রতিটি শব্দ রাজনৈতিক, সেই অবসরে
কফির টেবিলে গোলাপ ফোটায় মার্ক্সের ভূত !
#
দামাল ছেলেরা সার্কিটে ঘোরে, হাতে পিস্তল
অলিতে-গলিতে তরুণ কবির লাশ পাওয়া যায়
#
কে ভালোবেসেছে চুল-স্ট্রেটনিং-করা মেয়েটিকে ?
আজ তার মুখ আবছা, কিছুটা ধূসর, ফ্যাকাশে
#
টানা চোখ, আমি পাতলা ঠোঁটের প্রেমে পড়ে গেছি
ব্ল্যাকহোল থেকে তোলো, আমাকেও মঞ্চে ওঠাও
#
আমি আততায়ী, তোমার পিছনে ছায়া হয়ে ঘুরি
আমি অপরাধী, আমার নামেও হুলিয়া রটেছে
#
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু  খেয়ে যাব, দম আটকে দেব,
শেষ কাকভোরে আমার হাতেই খুন হবে তুমি !










                                                                                               
পকেটে রিভলবার নিয়ে ঘুরছে বাংলা কবিতা
পরপর খুন হচ্ছে, এলাকা সন্ত্রাসকবলিত !
#
এফোঁড়-ওফোঁড় করা বুলেটে নিথর মৃতদেহ
কার ? এই শতকের আরেকজন আশু মজুমদার ?
#
কাল সারারাত জুড়ে কয়েকপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে
স্বপ্নে, ছায়াছবিতে, তার মুখ ভেসে উঠেছিল
#
ভোরের হোয়্যাটসঅ্যাপে যে লেখে নিজের স্মৃতিকথা
উজ্জ্বল সিসিডিতে যার হাসি বিদ্যুৎ ছড়ায়
#
আমি তাকে আরও যতো বেশি করে কাছে পেতে চাই
সে ততো দূরের লাইটহাউস হয়ে আলো ঠিকরে দেয় !
#
ভালোবাসা সেরিব্রাল, আবেগের রাশ টেনে ধরে
নিজেকে আরেকবার ‘গ্যাংস্টার’ বলে মনে হয়...













মেয়েরা নিজেকে প্রতিষ্ঠান মনে করে
ভাবে, অন্ধ পুরুষের নিঃসপত্ন অধিকারী তারা !
#
ক্ষমতা সবখানে আছে । ব্যস্ত কফিশপ,
মেসেঞ্জার, ইনবক্সও ক্ষমতার শিরাতন্তুজাল
#
একদিন, মুহূর্ত আঁকড়ে তোমার জন্যই
                                     বেঁচেছিলাম !
#
তুমি সেই ঘন্টামিনিটের কাঁটা নষ্ট করেছ
রেস্তোঁরা, কবিসভায়, হাহা-হিহি বন্ধুসমাহারে
#
মাথার পিছনে কোনো জ্যোতির্বলয় নেই !
#
যাকে তুমি খ্যাতি আর নিরাপত্তা ভাবো
তা আসলে মিথ্যাচার । বাসি কাগজের পচা ফুল
#
তুমি ওই নিউজপ্রিন্টে, হলুদ অক্ষরে মুছে
                                         যাবে...











সব প্রেম নষ্ট হয় জুন-জুলাই মাসে
আরেকটু বয়স বাড়ে । বৃষ্টি নেমে আসে
#
চরাচর । মুছে যাওয়া দিগন্তের বাঁক
মেঘেরা শরণাগত স্মৃতির দরজায়
#
ধাক্কা দেয় । প্রত্যাখ্যান । ক্ষ্যাপা ষাঁড় হয়ে
গল্পের ভিতরে ঢোকে মার্জিনের ভূত...
#
একদিন কিনারে বসে চুমু খেয়েছিলে
যাকে, সে কোথাও নেই । তপ্ত অলিগলি
#
আজ সচকিত । ভাঙা বোমার স্‌প্লিন্টার
শরীরে বিঁধেছে । কার রক্তমাখা জামা
#
পূবদিগন্তের কোলে নিশান হয়ে ওড়ে ?
দেবর্ষি, কমরেড, আমি তোমার বুলেটে
#
একদিন লিখে দেব অজস্র কবিতা !











মনে থাকবে সন্ধেবেলাগুলো
মনে থাকবে উবের-রাইড
মনে থাকবে কবি-সভা থেকে
এসি-মেট্রোয় ফিরে আসা
#
ইলেকট্রিক তারে-বসা পাখি
বৃষ্টিভেজা দু’চারটে কাক
#
ঘাড় উলটে, মরে পরে আছে...
#
ভুলব না বিমূর্ত কথকতা
আকাঙ্ক্ষার ভাঙা দেউলের
#
ভিতরে বিগ্রহ রাখা ছিল...
#
দুর্মূল্য রত্ন রাখা ছিল !














অন্য কোনও চোরাদরজা নেই...
#
ছেঁড়া পান্ডুলিপি রাখা আছে
সেই বিস্ফোরক চিলেকোঠায়
#
আর, চাঁদ পিছনে সরে যায় !
#
তুলট কাগজে-আঁকা মেঘ
মেঘে মেঘে বিস্ফারিত আলো
#
আবার বিদ্যুৎ চমকাল
#
তোমার ওড়না-ঢাকা মুখে
অপরূপ বৃষ্টির ঝালর...
















বাতিল আগুনে ছুঁড়ে ফেলো
তেতো, কষা, রক্তাক্ত শরীর
#
ফিনিশিং লাইন ছুঁতে গিয়ে
একবার ক্রিজের দিকে চাও
#
গ্যালারির বাইরে তাকাও
#
লেখা তো তুচ্ছ, তাকে দিয়ে
স্কোরবোর্ড ছুঁয়ো না কোনোদিনও
#
লেখা কোনও টি-২০ নয়
#
হাজার শ্রমের বিনিময়ে
শস্য বোনে নিবিড় কৃষক
#
তার রক্ত-ঘামের কান্না শোনো
#
তার অসহায়তা টের পাও...











তোমার কবিতা পাঠ শুনিনি কখনও
#
আধঘন্টা দেরি করে ঢুকেছি সভায়
#
তোমার কথা-বলায় দিগন্তের তারা-খসা আলো
আমি সে-আলোয় পুড়ে গেছি
#
কবে তুমি হাত ধরবে ? অসুখের দিন
কবে তুমি মেলে দেবে ঠান্ডা জলপটি ?
#
ঠিকানা আমার, মুছে গেছে :
#
আজ সেই ঘরহারা ক্লান্ত পথিকের দরবারে
তুমি এসো শান্ত ঝড়, লন্ডভন্ড করে দিয়ে যাও...
















১০
তুমি ফিরছ ওলা বা ট্যাক্সিতে
কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক
আজ মনকেমন করছে খুব
সমুদ্রের জলে আর্সেনিক
#
বিষ জমছে হৃদয়ে, মেধায়
শব্দ আর অক্ষরের ক্ষুধা
তোমাকে পাগল করে দেয়!
চোখ মেলে তাকাও, বসুধা
#
আজও অপেক্ষা করে আছে
স্বপ্ন আর কামনা তোমার
ল্যাপটপে বন্দি পাখিরাও
ভেঙে ফেলছে গরাদ, খাঁচার
#
বাইরে এক পাগল নভোচারী
তোমার মেসেজ ছুঁয়ে যায়
তার রক্তক্ষরণের দিন
সে শুধু তোমাকে ছুঁতে চায়
#
সে হাত বাড়িয়ে দিতে চায়...









১১
সারাক্ষণ তোমার কথা ভাবি
তোমার তুলো ওড়াই কাশবনে
#
ব্রিজের নীচে ট্রাফিক, যানজট
চা-ওয়ালারা খুচরো টাকা গোনে...
#
রাত্রি নামে জীবনানন্দের
ধূলিধুসর বাদামী স্ট্রিটল্যাম্প
#
প্রথম-দেখা জঁ-লুক গোদারের
দৃশ্য থেকে দৃশ্যে হরদম
#
জাম্পকাটের অমোঘ খেলাধুলো
কুন্দেরার ফাজিল ঠাট্টায়
#
জীবন হাসে আলগা, মুখ টিপে
আমার হাত তোমায় ছুঁতে চায়
#
আমার আত্মা তোমায় পেতে চায়...











বানভাসি ঢেউ । উপচে-ওঠা তারা
নোঙর খোঁজে অন্ধ সর্বহারা
#
তুমি কোথায় ? বার-বি-কিউ জোনে ?
তোমার গল্প বান্ধবীরা শোনে ?
#
পার্ক স্ট্রিট । রাত শিশিরে ধুয়ে যায়
বৃদ্ধা গণিকাদের কান্নায়
#
ঠায় দাঁড়িয়ে লেনিন দেখে নেন
দোকানিরাও পশরা গোটালেন
#
তোমার গাড়ি ট্রিংকাসের মোড়ে
ইউটিউব মনকেমন সুরে
#
তুমি হৃদয়ে আড়াল টেনে দাও
পথ-হারানো বাচ্চা মেয়েটাও
#
ঘরে ফেরার অপেক্ষায় । ভোর
হবার আগে নিঃস্ব ফুলচোর
#
তোমার জন্য একলা বসে থাকে
মাদমোয়াজেল, স্পর্শ করো তাকে !







১৩
মাদমোয়াজেল, কষ্ট হচ্ছে খুব
শীত নামছে । বাতাস এলোমেলো
ইনবক্সে কয়েকটুকরো মেসেজ
আগুন হয়ে আবার চমকাল
#
যা-কিছু আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম
আকৈশোর, স্মৃতির গলিঘুঁজি
তুমি কি তার প্রতিষেধক হবে ?
দরিদ্রের স্বল্প-জমা পুঁজির
#
বিকল্প নেই অন্য কিছু, তাই
তোমায় মিস করতে থাকা ছাড়া
আমার কোনো উপায় নেই, আর
গ্রহচ্যুত, একক, ঠাঁইনাড়া
#
আমি বানাই নতুন বাসাবাড়ি
ভরদুপুর, স্বপ্নে-কামনায়
তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে দেবার আগে
নৌকো আমার নোঙর ছিঁড়ে যায়...











১৪
অন্ধের মতো ঘুরে বেড়াতাম পথ থেকে পথে
কুকুরের পায়ে পিছনে ছুটত অণু-মহাকাল
কে কার শরীরে হারিয়ে গিয়েছে আজ মনে নেই
কে ভৈরবীর ছন্দে মিশেছে গানের ভেতরে
#
পিছুটান, আজ ফ্ল্যাশব্যাকে সেই একুশ বছর
মনে পড়িয়েছ তুমি, নিভে-আসা লার্জ ক্যাপুচিনো
কফিশপ, আমি তোমাকে নিজের আত্মা ভেবেছি
ডাউন মেমোরি লেনে মিশে গেছি বকুলবাগানে
#
জয় পারলেন, জয়ই ঘটান এই মির‍্যাক্‌ল
মলিন পাজামা উঠে যেত একা তেতলার ঘরে
আমি ভুলে গেছি নীল চিলেকোঠা, পায়রার ডাক
নিঃস্ব অতীত ফিরিয়ে এনেছ, মাদমোয়াজেল...
















রাত্রিদিন ভয় বুকে নিয়ে বেঁচে থাকো তুমি
শামুকের খোলের গর্তে সেঁধিয়ে যাও
কখন ঢুকবে এস.এম.এস তোমার মৃত্যুপরোয়ানা
সিরিঞ্জ এসে টেনে নেবে রক্ত
মুখে পাশবালিশ চেপে, দম আটকে মেরে
                                 ফেলার আগে
আবছা সিলুয়েটের মতো ভেসে উঠবে
পর পর ছবি, ন্যাকড়ার পুতুল হাতে
ঘুমোতে যাচ্ছে তোমার মেয়ে, বউ রাতপোশাকে
                          উল্টোচ্ছে বইয়ের পাতা
#
নির্বোধ আকাশ আরও একবার জিভ ভ্যাঙায়
শহরতলির একলা ঘর ছোটো হয়ে আসে
টেবিল ল্যাম্প, মাকড়সার ঝুল, শান্ত জলের
                         বোতলের অনিশ্চয়তা
ঠুঁটো জীবনের ভিতর থেকে অসহায়
মুহূর্তগুলো খুঁজে আনে, টিপে মেরে ফেলে
#
যতক্ষণ না আরেকটা ভোরবেলার গল্পে 
                         তোমার পুনর্জন্ম হয়!




No comments:

Post a Comment