Tuesday 10 April 2018

গৌতম ঘোষদস্তিদার




দেবশিশু



যাযাবরদের ফুটফুটে মেয়েটি কি হারিয়েছিল ওই উঁচু-পাহাড়ের বাঁকে
ভেড়াদের সঙ্গে সে-ও দিনে-দিনে ফুটে উঠেছিল সকলের অগোচরে,
সে কেবল জানে চোখে-চোখে একটি-একটি ভেড়া সঠিক গুনে যেতে,
সে মা জানে, বাবা জানে, পরিজন জানে, পাহাড় ও তৃণভূমি জানে,
আকাশের তারা জানে, দেখেছে তারাও ভেড়ার মতো চড়ে আকাশের মাঠে,
সে ঝরনা জানে, নদী জানে, জানে তরুবীথি, আর জানে অসহনীয় খিদে;
আসিফার সঙ্গে আসিফের তফাত জানেনি সে এখনও, সে অতি-নিরাকার;
বুনো-খরগোশের মতো তারও কচি রক্তমাংস-হাড়গোড় দিব্য সুস্বাদু হবে,
জেনেছে শিকারির দল, বাপ-বেটা দলবল নিয়ে থাবায় নিয়েছে তাকে,
নিয়ে গেছে দেবালয়ে, নিথর বিগ্রহের কাছে ছিঁড়েছে-খুঁড়েছে প্রতিদিন;
দেবতা অসহায়, তিনি আসিফার নন, শিকারিরা ভক্ত তার, কন্যাটি অপর
চেতনালুপ্তির আগে, বাঘের সামনে হরিণের মতো, সে খুঁজে পাবে কাকে;
অবোধ বালিকা জানে শুধু ভেড়াদের রক্ষাপথ, নিজের দেবতাও অজানা তার,
জ্ঞান আসে, জ্ঞান যায়, বারবার বিদ্ধ হয়, বিদ্ধ হতে থাকে চিরকাল, রামচন্দ্র হাসে;
শিশুরক্তে ভিজে যায় মন্দির-মাজার, বিধর্মীর রক্ত চেটে খায় বাপ-বেটা, দলবল
তারপর অন্ধকার ঝোপের ভিতরে মরে গিয়ে ফের জেগে ওঠে মেয়ে সকালশিশিরে,
জেগে উঠে ভেড়াদের মতো, তারাদের মতো ফুটে ওঠে পৃথিবীর মায়েদের কোলে!

2 comments: