Wednesday 11 April 2018

ফিরে পড়া কবিতা - কবি যুগান্তর চক্রবর্তী






সর্গ

তোমার বুকের জামা তুমি খুলে দেবে নিজ হাতে,
আমি চাই। আমার নশ্বর হাত অন্যত্র রয়েছে।

আমি চাই উসর্গহীন
সব লেখা, সব প্রেরনার আগে তুমি।

তোমার বুকের পরে আজ কোনো অপর কবির
দাবি নাই। সমস্ত নশ্বর হাত অন্যত্র রয়েছে।

আমাদেরও মুখোমুখি শুতে হবে,
              ওরা কি বোঝে না!



ছিন্নপত্র ১৯৬৭

আমাদের ডাকঘর ছিল না আমাদের চিঠিগুলির চলাচল হতো
হাতে-হাতে
আমাদের হাতে-হাতে বিনিময়ের সেই আদিম দিনগুলি যখন পৃথিবীর
কবিমাত্রই অজ্ঞাতনামা
আজ এতকাল পর আমরা কি তবে আবিষ্কার করবো কোনো প্রকাশ্য ডাকঘর
ও সেই লাল ডাকবাক্স
তোমার বুজে যাওয়া চোখের আড়ালে
তোমার নগ্নতার মতো যা লাল

আমাদের বিচ্ছেদ আজ এতদিনে সম্পূর্ন হয়ে এলো মনে হয়।  


গান

তোমাকে গানের দেবী মনে হয়, কিন্তু কই তোমার নগ্নতা!
যা ছাড়া পায়ের কাছে বসা ভার, ঊরুর উপর ন্যস্ত মাথা
রাখা ভার।
                       তুমি তো গানের দেবী
                       কিন্তু এনেছিলে কোন গান
সে কি রেখেছিলে মনে? কিছু তার জানে কি স্তব্ধতা?
তোমার বিস্মৃতি- সে কি তোমার শাস্তির পরিমান?

তুমি কি গানের দেবী?
                     কেন পাশে রয়েছ শয়ান?
তোমার মাথার কাঁটা বুকে রেঁখে, দেখি না যে ডানার যুগ্মতা!

আমাকে শোনাতে হবে বলে তুমি শেখো নাই
                     কোনো প্রিয় গান।


পূর্ণিমা ১৯৬৭

পূর্ণিমা, তোমার গায়ে গতবছরের গঙ্গাজল
লেগে আছে। তুমি সমসাময়িক হতে শেখ নাই।
তোমাকে যেতেছে আজও স্পষ্ট দেখা,
               তুমি আজও গত বছরের
ফেরিঘাট ব্রিজ স্ট্যান্ড ট্রামলাইন ট্র্যাফিক সংকেত
পার হয়ে দেখা করো, কাছে আসো, বসে থাকো পাশাপাশি,
গত বছরের কাছাকাছি।

তুমি স্মৃতিবিস্মৃতির চেয়ে কিছু বেশি
তুমি নগ্ন করো নীল পান্থশালা।
তুমি পরিপ্রেক্ষিতের অর্থ চাও,-তোমার বিছানা
এইখানে পাতা হবে, তুমি বলো।

পূর্ণিমা, তোমার বুকে গতবছরের প্রাচীনতা।
তুমি রেখেছিলে হাতে, মনে হয়,
চিরজীবনের মুখভার।             


বৃষ্টিপাত হয়ে গেলে

বৃষ্টিপাত হয়ে গেলে রাত্রি এক মাঠের কাহিনি।
শিকড়ে আসক্ত জ্যোস্না, সিক্ত চাঁদ নক্ষত্রনিকরে।
আচম্বিতে দুঃখ জাগে, দুঃখ ঘোর পায়ে পায়ে ঘোরে।
জলের শিয়রে মৌন বৃক্ষ, তুমি কার কাছে ঋনী।

জলের শরীর বৃক্ষ, ছায়া ধরো জলের শিয়রে।
তোমার শরীর বৃক্ষ, স্রোতায়িত নীরব প্রস্তুর।
কেউ অস্ত্র গড়েছিল, কেউ তুলেছিল শান্ত ঘর।
প্রবাহ ফেরাতে থাকো উভয়ে জলের বক্ষোপরে।

প্রবাহ ফেরাতে থাকে বক্ষোমাঝে নিদ্রিতাসুন্দরী।
থাকে অন্তঃপুরে নগ্নঅস্ত্ররেখা সুন্দরী আমার।
কিছুবা প্রস্তর বুঝি, কিছুবা স্বচ্ছল স্রোতোধার।
শিকড়ে আসক্ত জ্যোস্না , সিক্ত চাঁদ কাঁপে বক্ষোপরি।

বৃষ্টিপাত হয়ে গেলে রাত্রি এক মাঠের কাহিনি।
আচম্বিতে দুঃখ জাগে, দুঃখ , তুমি কার কাছে ঋণী।



হত্যাকারী কে

গ্রেপ্তার,গ্রেপ্তার করো, অসংখ্য চিঠির পরোয়ানা
ছুটে এল অকস্মাত মধ্যরাত্রের চতুর্দিক থেকে,
শব্দের কুকুরগুলি হন্যে হয়,-ঠিকানা না-রেখে
হত্যাকারী পলাতক,-দাঁতে নখে বালিশ বিছানা

বুকের আঁচল, কারুকার্যকরা শায়া, ব্রেসিয়ার
ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করে শুঁকে দেখে শব্দের কুকুর
চুম্বনবিহীন ওষ্ঠ, সংগমবিহীন যোনি, ক্রূর
রক্তপাতহীন ঠান্ডা জঙ্ঘা জানু,- অযৌন প্রহার

ছত্রখান চতুর্দিকে। শুধু হাত, শীর্ণ দুটি হাত
বড় বেশি অসম্ভব স্পর্শে একা অলীকঅসতী
হয়ে আছে, যেন এই বিপন্নতা ছাড়া অন্যগতি
ছিল না কোথাও, এই অপরাধে আজ ধ্বস্ত রাত

ঘেরাও চিঠিতে, শব্দে- এবং হত্যার রক্তে লাল
নিশ্চিত প্রমাণ আজও দিতে পারে অমর রুমাল।


আমার নিজস্ব কোনো বাক্স নেই

আমার নিজস্ব কোনো বাক্স নাই, যেখানে তোমার
উপহারগুলি রাখি। আজ তাই বুকের ভিতর
নিজস্ব কক্ষের ভিত খননের কাজ শুরু হল।
পাতা হল চারিদিকে উপদ্রুত টেলিফোন লাইন,
এদিক-ওদিক কিছু বাস-স্টপ,
রেস্তোরাঁ, ময়দান, অন্ধকার,
তীব্র ইলেকট্রিক ট্রেন, বেশিদূর নিশ্চিত যাবে না।
বাকি থেকে গেল আজও এরোড্রোম বসানোর সাধ।

No comments:

Post a Comment