Saturday 7 April 2018

সৌমেন চট্টোপাধ্যায়


একগুচ্ছ কবিতা



টবে রাখি ফুল গাছের চারা

টবে রাখি ফুল গাছের চারা
বকুল ফুল ডানা মেলে দিলে
একটা উত্তরে বাতাস আসে
আমাদের বারান্দায় একা
ভয় ভয় করে সবার ।

আপাততঃ টবে ফুলের কুঁড়ি আসুক
ততক্ষণে ঝাঁপ ভাঙা বৃষ্টি নামছে
খেলার মাঠে আর শিউলিতলায়
অসময়ে বৃষ্টি আর শিউলি এলে
পাড়ায় টাইফইয়েডের আশঙ্কা ছড়ায়।

টবে রাখা গাছের চারায় ফুল
ধরলে তোমার জন্য অসময়ে প্রেমপত্র
লিখে দেব বারান্দার জলে।
টব থেকে শিকড় খুঁজতে গিয়ে
ও পাড়ার বউটা জলে ডুবে মরল।

সবাই বলেছিল ওকে ডাইনি পেয়েছে
কেবল আমি জানি ওর টবের গাছে ফুল এসেছিল।



গুটিপোকা চরকা ও জোনাকির দল

সম্পর্কে স্বার্থ মিশে গেলে দানা বাঁধে গুটিপোকা
রেশম সুতোয় বসে থাকে আশ্চর্য জোনাকির দল
তারপর সম্পর্কে বাঁধন দিলে নাম দিই ভালোবাসা
অথচ চরকায় সুতো বুনলে মরে যায় গুটিপোকা

হাঁটি হাঁটি পা পা আমার খোকন শুনে যা
অর্জুন গাছের পাতা খেয়ে নেয় যে পোকা
তার থেকে বের হয় আশ্চর্য তসরের গল্প
আমি বোকা প্রেমিক বারবার চরকা ঘোরাতে থাকি

চাঁদের দল নেমে আসে আমাদের উঠোনে
ঘুম পাড়ানিয়া গান শুনে জাল বুনে দিই জোছনার
অথচ রাত্রি শেষে সম্পর্কের দখল নেয় মৃত খোলক ।



বিচ্ছিন্নতা

পোষ্টকার্ড ছিঁড়েছি ঠিকানাহীন
  সঞ্চয় শুধুই হাপিত্যেশ
ঈশ্বর এর মুখে বসন্তের দাগ মৃত্যু কামনা পুরনো অভ্যেস
আলগা হয়ে যায়
  উত্তরপুরুষ মুঠোতে ধুলো জমা স্মৃতিকথা
তর্পণ শেষ হলে মন্ত্র জমা পড়ে জলস্পর্শ করে সকল প্রাচীনতা

শিকড় আলগা গাছ স্বর্গ জুড়ে কাঠের পেরেকে যিশুর মুখ
শেষ পিওনের চিঠিতে জলছাপ
  মুখর উপত্যকা খাদ্যভূক ,
ব্যাগ ভর্তি লাশ টেনেছে
  যমদূত দাঙ্গা শেষে  এখন শান্তি থাক
রক্ত
  ধারা মেনে নদী চলে গেছে বয়স বাড়ার দেশ নিপাত যাক ।

কলকে ফুল ফোটার
  বিজ্ঞপ্তি ছেপেছে মানুষ শূন্য উপত্যকা
মৃত্যুর দেশে সবার হলুদ রং
  ঝাঁক বাঁধে  শুধু একলা থাকা ।
বয়স বেড়ে যাওয়া রোগের ওষুধ নেই হাকিম বৈদ্য আয়ুর্বেদিক
ঈশ্বরের মুখে
  বসন্তের দাগ জমে সময় শিরস্ত্রাণ ছিন্ন সৈনিক ।

প্রত্যাশা

এক মুঠো শীতকাল আর পাতলা
কুয়াশার মতো সম্পর্করা ক্ষণস্থায়ী
তবুও খেজুর গাছে শিউলিরা
বেঁধে রাখে মাটির হাঁড়ি
সযত্ন গোপনীয়তায়
বিন্দু বিন্দু রস জমে
প্রখর গ্রীষ্মেও সম্পৃক্ত হয় নাভীমূল
 




জলছাপ নকশা

চাঁদের গায়ে জলছাপ নকশা দেখে উঠে বসেছিলুম জ্বর গায়ে । একখানা ভেজা কাপড়
কপাল বন্দী উষ্ণতাকে গিলে খাচ্ছে মনে হলো । হাভাতে ভালোবাসা এঁটো ফুটপাত
থেকে কুড়িয়ে নিলো স্পষ্ট দেখলুম ছেঁড়া ছেঁড়া কান্না ও বিষণ্ণতা । মেঘের
কোলে মুখ লুকিয়ে থাকা বিদ্যুৎ তখনও বাতাস ফাটানো আওয়াজে গর্জন করে উঠতেই
বুঝলুম
  জলছাপ নকশা আসলে একটা ফাঁদ । শিশির আটকানো পোকার মাকড়সার
অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নেই জেনেই ভেজা কাপড় থেকে জল নিংড়ে নিয়ে উপুড়
হলুম । মেঘ ভর্তি জ্বর তখনও চৌকাঠে আটকে । জলছাপ নকশার মুখে সিঁদুরের দাগ
উঠে যাওয়া সিঁথি । মোড় মাথায় দাঁড়িয়ে আছে একলা চাঁদ । নকশা করা চাদর গায়ে
। একলা ফটফটে জোছনা মাখা মেঝেবন্দী অসুখের সুখ সংসারের অচল খবর সংবাদের
পাতা জোড়া চোখ । চড়কা কাটা বুড়ির উজ্জ্বল মুখ আটকে নর্দমার কালো জলে
 

No comments:

Post a Comment